ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র এস এম ইকবাল হোসেন সুমন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সরেজমিনে তদন্তে প্রমাণিত না হওয়ায় নথিভুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এতে অনাস্থা প্রস্তাবটি মিথ্যা প্রমানিত হলো। গত চার অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আনিত অভিযোগ গুলো ছিল, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, লোকবল নিয়োগ, স্বাক্ষর জালিয়াতি, নিম্নমানের কাজ করা সহ বিভিন্ন অনিয়ম।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ মার্চ গফরগাঁও পৌর সভার মেয়র ইকবার হোসেন সুমনের জন্মদিন পালিত হয়। ওই জন্মদিনে ফ্রান্স প্রবাসী মেয়রের বন্ধু ইনসাফ সুমন ভুইয়া নামে একজন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ওই ফেসবুক পোষ্টে ইনসাফ সুমন ভুইয়া লিখেন, “শুভ জন্মদিন বন্ধু এসএম ইকবাল হোসেন মেয়র, গফরগাঁও পৌরসভা, ভবিষ্যতে তোমাকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই।” ওই পোষ্টে মেয়র সুমন ধন্যবাদ জানিয়ে কমেন্ট করেন।
এরপর থেকেই মেয়র ও অনুসারীদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। এই ঘটনায় পর থেকে মেয়র সুমন ও অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর গত রোজার ঈদের দিন ২২ এপ্রিল মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন ও তার অনুসারীরা এলাকায় এসে নামাজ পড়তে যায়। এমপি ফাহমি গুলন্দাজ বাবেলের সমর্থকরা এমন খবর পেয়ে মেয়র সুমন ও তার অনুসারীদের উপর হামলা করে।
এই ঘটনার পর থেকে আবারও মেয়র সুমন ও তার অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এবং গফরগাঁওয়ে আসলে মেয়র সুমনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
এই ঘটনার জের ধরে পৌর সভার প্যানেল মেয়র-১ শাহজাহান সাজুকে মেয়র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এক শ্রেণির লোক উঠেপড়ে লেগেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) সাজুকে মেয়র সম্ভোধন করে পোষ্ট দিতে থাকেন। পরে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে গফরগাঁও পৌরসভার মেয়র ইকবাল হোসেন সুমন অভিযোগ করে বলেন, সামান্য ফেসবুকের পোস্ট কে কেন্দ্র করে এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করার আসল কারণ হলো আমার জন প্রিয়তা দেখে এমপি সাহেব ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলেন তিনি মনে করেছেন আমি এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইব কিনা, তাই এমপি সাহেবের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার অনুসারীদের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আহত করে যেন নারকীয় তাণ্ডবের সৃষ্টি করে, প্রাণভয়ে আমি গফরগাঁও ছারতে বাধ্য হই গফরগাঁও গেলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে । আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে অনাস্থা দিয়েছে যে বিষয়গুলো নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছে অনাস্থা স্বাক্ষর নিয়েছে তা তদন্তে প্রমাণ হয়েছে আমি নির্দোষ আমি নিরপরাধ এসব বিষয়ের সাথে আমি সম্পৃক্ত নই।
গফরগাঁও পৌর সভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ বাবুল হোসেন বলেন, মেয়র সাহেবের বিরুদ্ধে আমাকে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে বললে আমি রাজি না হওয়ায় এমপি সাহেবের লোক জন আমার বাড়িঘর ও অফিস ভাঙচুর করে ঐ সময় আমাকে পেলে ওরা আমাকে মেরে ফেলত কোন ভাবে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গফরগাঁও ছেড়ে চলে আসি, গফরগাঁও ছাড়ার পরেও অন্যত্র স্ত্রীর সন্তান নিয়ে বস বাস করেও হুমকি ধামকি থেকে রেহাই পাচ্ছিনা একটি ভয় যেন পায়ে পায়ে তাড়া করে ফিরছে কখন কি হয়, অথচ যে সকল মিথ্যা অভিযোগ এনে মেয়র সাহেবের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়ে ছিল তা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এমন কোন কর্মকান্ডে মেয়র সাহেব জড়িত নয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি কামনা করছি যেন এই বিষয়টি নিরশন কল্পে মেয়র সাহেব যেন পুনরায় গফরগাঁও ফিরে গিয়ে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। আর আমরা প্রায় এক হাজার মানুষ যারা গফরগাঁও থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রাণ ভরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমরাও যেন নির্ভয়ে নিজ জন্ম স্থানে ফিরে যেতে পারি।
যুবলীগ নেতা তাজমুন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, আমরা মুসলিম জাতি ধর্ম প্রাণ মানুষ আমাদের বিশেষ দিন হল শবে বরাত ও ঈদ, মানুষ আল্লাহর কাছে পাপ মুক্তির জন্য পানা চায় তা না করে এমপি সাহেবের পালিত সন্ত্রাসী-বাহিনী দের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতে হয়েছে। তার পরেও কেউ রক্ষা পায়নি তাদের রোশানল ও অস্ত্রের মুখ থেকে কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে। ফিল্মি স্টাইলে আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমার কষ্টার্জিত ইটভাটা কেড়ে নিয়েছেন, অস্ত্রের সামনে জিম্মি করে রেখে লিখিত ও খালি স্ট্যাম্পে সই করিয়ে আমার ছয় কোটি টাকার সম্পদ কেড়ে নেয়। আজ আমি নিঃস্ব হয়ে প্রাণের ভয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি তবুও যেন নিস্তার নেই আমার, আমার বিরুদ্ধে পুলিশি হয়রানির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অন্য যে কেউ গফরগাঁও থেকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলে ওনাদের উপর মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে বাবেল সাহেব রাজাকারের সন্তান অথবা যে কোন উপায়ে ওদের মানহানী করে।